
চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাণ খ্যাত কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধভাবে দখল করা ২১৮১টি স্থাপনা উচ্ছেদে আর কোনো বাধা নেই। মঙ্গলবার উচ্চ আদালতের বিচারপতি ফারাহ মাহাবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের বেঞ্চ এক আদেশে হাইকোর্ট নির্দেশিত ২১৮১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে মৎস্যজীবী সমবায় আদালতে একটি রিট মামলা দায়ের করেন। এরপর অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ রিট খারিজের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, উচ্চ আদালত কর্ণফুলী নদীর স্থাপনা বিষয়ে সমস্ত আদেশ খারিজ করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে নদীর উভয় তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদে আর কোনো বাধা থাকল না। আমরা আশা করব, স্থানীয় প্রশাসন আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবেন। চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, উচ্চ আদালত সময়োপযোগী একটি রায় দিয়েছেন। আদালত শিগগিরই অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ২১৮১টি স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আমরা পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
জানা যায়, আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর কর্ণফুলীর দুই তীরে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। নগরের নেভাল একাডেমি সংলগ্ন নদীর মোহনা থেকে মোহরা এলাকা পর্যন্ত অংশে ২০১৫ সালে জরিপের কাজ শেষ করা হয়। জরিপে নদীর দুই তীরে ২ হাজার ১৮১টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে। প্রতিবেদনটি ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর উচ্চ আদালতে দাখিল করা হয়। ২০১৬ সালের ১৬ অগাস্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা স্থাপনা সরাতে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেন।
২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। অর্থ সংকুলান না হওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়নি। পরে ভূমি মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে অর্থ সংস্থানের পর অভিযান শুরু হয়। ২০১৯ সালের গত ৪ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি টানা পাঁচদিনের অভিযানে ২৩০টি স্থাপনা উচ্ছেদ ও প্রায় ১০ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়, আালোর মুখ দেখে পাঁচটি খালের মুখ। বন্দর এলাকা থেকে শুরু করে বারিক বিল্ডিং মোড়-গোসাইলডাঙ্গা-সদর ঘাট-মাঝির ঘাট-শাহ আমানত সেতু হয়ে মোহরা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলেমিটার নদীর তীরকে তিনভাগে ভাগ করে শুরু হয় অভিযান। প্রথম ধাপে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয় নগরের সদর ঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে। কিন্তু এরপর চার বছর পার হলেও বাকি স্থাপনাগুলো এখনও ঠাঁই দাড়িয়ে আছে।