Tuesday, February 11, 2025
HomeAir-Pollutionঢাকার বায়ুদূষণ

ঢাকার বায়ুদূষণ

পরিবেশ অধিদপ্তর দায় এড়াবে কীভাবে

পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারের যেসব সংস্থা পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণের কাজে নিয়োজিত, তাদের দীর্ঘদিনের অবহেলা, উদাসীনতা ও অকর্মণ্যের কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বুধবার বায়ুদূষণ-সংক্রান্ত রিটের শুনানিতে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

‘ঢাকায় নিশ্বাস নিলেও বিপদ’ শিরোনামে গত ২৯ জানুয়ারি প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ৩০ জানুয়ারি পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।

আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৩১ জানুয়ারি আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ঢাকায় বায়ুদূষণ রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে বলেছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, কয়েক দিন ধরে রিপোর্ট হচ্ছে যে বিশ্বের সর্বোচ্চ দূষণের তালিকায় ঢাকা। বায়ুদূষণ রোধে আদালতের ৯ দফা নির্দেশনা সত্ত্বেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় আবেদনটি করা হয়।

এইচআরপিবির আবেদনে বায়ুদূষণ রোধে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়। এইচআরপিবির করা এক রিটের ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন; যার মধ্যে আছে ঢাকা শহরে মাটি, বালু, বর্জ্য পরিবহন করা ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে মালামাল ঢেকে রাখা; নির্মাণাধীন এলাকায় মাটি, বালু, সিমেন্ট, পাথর ও নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা; সিটি করপোরেশনকে রাস্তায় পানি ছিটানো; রাস্তা, কালভার্ট, কার্পেটিং, খোঁড়াখুঁড়ির কাজে দরপত্রের শর্ত পালন নিশ্চিত করা; সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে গাড়ির চলাচল সময়সীমা নির্ধারণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধ করা; পরিবেশগত সনদ ছাড়া চলমান টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা; মার্কেট বা দোকানের প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যাগে ভরে রাখা এবং বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করা।

এ নির্দেশনার পাশাপাশি আদালত যেসব মন্তব্য করেছেন, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনারা বায়ুদূষণ না কমিয়ে আমাদের হত্যা করছেন। এই বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যকে অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অনুগ্রহ করে বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে আমাদের রক্ষা করুন।’ একই সঙ্গে আদালত রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া কোনো অগ্রগতি হবে না বলে মন্তব্য করেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনজীবী যখন বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান, তখন আদালত জানতে চান, ‘উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কি কেবল চা খাওয়ার জন্য?’

আদালতের এসব মন্তব্য ও পর্যবেক্ষণ কেবল পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নয়, গোটা নির্বাহী বিভাগ সম্পর্কে। ঢাকার চারপাশের নদী রক্ষায় উচ্চ আদালতের দেওয়া নির্দেশনাও বাস্তবায়িত হয়নি। নদী ও বায়ুদূষণে ঢাকা যে বসবাস অযোগ্য শহরে পরিণত হতে চলেছে, এর প্রতিকার কী? এ বিষয়ে দায়সারা জবাব দিয়ে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।

যাঁদের অবহেলার কারণে আদালতের নির্দেশনা এত দিন প্রতিপালিত হয়নি, তঁাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দায়িত্ব নেওয়ার আগের ঘটনা বলে দায় এড়িয়ে থাকেন। কিন্তু সরকার দায় এড়াবে কীভাবে? আশা করি, দেরিতে হলেও কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙবে এবং তারা ঢাকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরের বদনাম ঘোচাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments