Tuesday, February 4, 2025
HomeNationalদখল-দূষণে করতোয়ার কান্না

দখল-দূষণে করতোয়ার কান্না

এক সময় নদী ছিল। এখন হয়ে গেল নর্দমা। বয়ে যাচ্ছে জীবাণু। আর নর্দমা হওয়ার সুযোগে ইচ্ছামতো দখল করে উচ্চ, সুউচ্চ, টিনশেড ভবন, কারখানা তৈরি করা হয়েছে। কোথাও কোথাও আবার নদীর মধ্যেই সীমানাপ্রাচীর দিয়ে দখল করে ভবন তৈরির কাজ চলছে। নদীর জেগে ওঠা চর নিজেদের জমি দাবি করে চলছে চাষবাস আর প্রশাসনের আড়ালে বালু তোলায় নদী হারিয়েছে তার গতিপথ। ঢেউ নেই, পানি নেই, পাড় নেই। ইচ্ছামতো দখল-দূষণে মরে গেছে করতোয়া নদী। অবৈধ দখলকারীদের দৌরাত্ম্যে থামছে না করতোয়া নদীর কান্না। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, প্রায় ২০০ কিলোমিটার করতোয়া নদীর তীরঘেঁষে প্রাচীন পুন্ড্রনগরীর গোড়া পত্তন হলেও সেই সভ্যতার সঙ্গে এখন করতোয়া নদীও ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিতে চলেছে। করতোয়া নদী বগুড়া শহরের বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে জেলার শেরপুর উপজেলার চান্দাইকোনায় বাঙালি নদীতে গিয়ে মিলেছে। উৎপত্তিস্থল থেকে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে দূষণ, দখল, ভরাট, পানি প্রবাহ না থাকায় এখন মরা নদী হিসেবে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ১৯৮৮ সালে বন্যার সময় তৎকালীন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরের খুলশিচাঁদপুর এলাকায় বাঁধ ও স্লুইস গেট নির্মাণের মাধ্যমে করতোয়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। সে সময় ওই অংশে করতোয়ার মূল স্রোত একটি শাখা নদীর মাধ্যমে বাঙালি নদীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এতে গোবিন্দগঞ্জ থেকে বগুড়ার দিকে করতোয়া নদীর প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে দিনে দিনে সরু খালে পরিণত হয়। একদিকে পানিশূন্যতায় প্রবাহ বন্ধ, অন্যদিকে ভরাট আর দখলের ফলে নদীটি এখন মৃত। করতোয়া নদীটি শহরের ভিতরের অংশে যে যেখানে পেরেছে দখল ও ভবন নির্মাণ করেছে। দুই একটি স্থানে পানি দেখা গেলেও শহর ও শহরতলীর প্রায় ৩০ কিলোমিটারে শুধু ড্রেনের কালো পানি বয়ে যাচ্ছে। দখল করা নদীর তীরঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে শত শত বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বিশাল বিশাল ভবন। নোংরা জীবাণুবাহী করতোয়া নদীতে পানি বয়ে যাচ্ছে। নদীর দুই পাড়ে রয়েছে কয়েক লাখ মানুষের বসবাস। নদীটি যত জীবাণু বহন করছে বগুড়াবাসীর জন্য ততই দুর্ভোগ বয়ে আনছে। শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। নদীর পাড় ঠিকমতো না থাকায় পাড়ও দখল হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে প্রশাসন থেকে কয়েক দফা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের কদিন পরে দখলবাজ চক্রটি আবারও পর্যায়ক্রমে দখল করে নিচ্ছে। জেলা সম্মিলিত জোটের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সিদ্দিকি জানান, করতোয়া নদী দখল হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রশাসন থেকে মাঝে কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও পরে আবারও অনেকেই সেই স্থানে অস্থায়ীভাবে ঘর তুলছে। নদীতে বর্ষা মৌসুম বা বন্যার সময় ছাড়া পানি দেখা যায় না। নদীর তলায় এখন ড্রেনের কালো পানি দেখা যায়। নদী না বলে শহরের সবচেয়ে বড় ড্রেন এখন করতোয়া নদী। নদী থেকে প্রতিদিন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অবৈধ দখলকারীদের দৌরাত্ম্যে থামছে না করতোয়া নদীর কান্না। শহরের চেলাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, নদীর পাড় না থাকায় অনেকেই ঘর তুলে আছে। ময়লা ফেলছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে। নদীর তলদেশে ড্রেনের কালো পানি ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। নোংরা আবর্জনায় ভরা থাকে। নদী থেকে প্রচুর মশা ও মাছি সৃষ্টি হচ্ছে। নদীর পানি বাড়িঘরের উচ্ছিষ্ট দিয়ে ভরা। কালো নোংরা পানি। দখল করে ঘর-বাড়ি করার কারণে নদীর অবস্থা খুবই করুণ। নদীকে আর নদী বলে মনে হয় না। জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা সূত্র জানায়, শহরের মধ্যে করতোয়া নদীর কয়েকটি স্থানে দখল হয়েছে। নদী দখল হয়ে যাওয়া স্থানে বাড়িঘর, ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দখল জমির পরিমাণ সাড়ে পাঁচ একর। করতোয়া নদী দখলের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সর্বশেষ বেশ কয়েকজন দখলদারের নামের তালিকা তৈরি করা হয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments