Monday, February 3, 2025
HomeNationalধরলার ভাঙনে বিলীনের পথে চর ফলিমারী গ্রাম

ধরলার ভাঙনে বিলীনের পথে চর ফলিমারী গ্রাম

কৃষি ও মাছ শিকার গ্রামটির মানুষের প্রধান পেশা। তবে কয়েক মাসে ধরলার দুই পাশের ভাঙনে প্রায় বিলীন গ্রামটি। সেখানকার একমাত্র বাজারটিও আর নেই, শুধু সেখানে স্মৃতি হয়ে রয়েছে একটি মসজিদ।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের চর ফলিমারী গ্রাম। গ্রামের উত্তর পাশে ভারতীয় সীমান্তবেষ্টিত ধরলা, আর অন্য পাশে বাংলাদেশের ধরলা নদী। ফলে দুটির মাঝে দ্বীপচর গ্রাম ফলিমারী। সে গ্রামে বাস প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক পরিবারের। সেই চর ফলিমারী গ্রামটি এখন ধরলা নদীতে বিলীনের আশঙ্কায়।

গত শুক্রবার গ্রামটিতে গিয়ে দেখা যায়, এক সময় যে গ্রামটি জনসমাগমে ভরপুর থাকত, সেটি এখন অনেকটাই জনশূন্য। স্কুল, মাদ্রাসা-মসজিদসহ গ্রামের বাড়িঘর যেন শুন্যের কোটায়।

কৃষি ও মাছ শিকার গ্রামটির মানুষের প্রধান পেশা। তবে কয়েক মাসে ধরলার দুই পাশের ভাঙনে প্রায় বিলীন গ্রামটি। সেখানকার একমাত্র বাজারটিও আর নেই, শুধু সেখানে স্মৃতি হয়ে রয়েছে একটি মসজিদ।

এরইমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে কয়েক শ বিঘা আবাদি জমি। বসতভিটা হারানো পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে অন্যের জমিতে। বর্তমানে সেই চর ফলিমারীতে ধরলা নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় যে অল্প কয়েকটি বসতবাড়ি রয়েছে সেগুলোও হুমকির মুখে রয়েছে।

চর ফরমালী গ্রামের হামিদা বেওয়া বলেন, ‘দশ-বার বার নদীত বাড়িঘর ভাঙ্গি গেছে। ফির ওই যে কাচারের উপরৎ আছি বাড়ি করি, হামাক কে কইবে যে পাঁচ শতক দেই বাড়ি করুক? কাও কবারও নাই, নদী যে বান্দিবে সে মানুষও নাই। হামাক কাও দেইকপাড়ও আসে না, বস্তাও ফেলে দেয় না। দুই পাকে নদী ভাঙ্গি নাগছে, কই কাও তো আসিল না একবারও দেইকপার?’

নুর আলী নামের একজন বলেন, ‘কতবার যে বাড়ি ভাঙ্গনো? এটে থাকি, ওটে থাকি এটে যাই, ওটে যাই। কোনটে যাই, যাবার তো জাগাও নাই। যেটে বাড়ি করি আছি সেটাও মানুষের জাগা। কাচারত বাড়ি কখন যে ভাঙ্গি যায়, সেই চিন্তায় বাঁচি না। খুব সমস্যায় আছি। নদীটাত যদি বস্তা ফেলাইল হয় তাহলেও একনা রক্ষা পাইনো হয়।’

ভাঙন কবলিত দ্বীপচর ফলিমারী গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল বলেন, ‘এটে বাড়ি আছিল। চাচা-খুড়া এক সাথে আছনো। সব ভাঙ্গি গেইছে। কী করি কোনটে যাই, কোনটে নাই যাই চিন্তাতে বাঁচি নাই। আমার চিন্তাতে ঘুম ধরে না। ৫ বার বাড়ি ভাঙ্গি এটে আসনো, সেটাও ভাঙ্গন শুরু হইছে। কি করি, কি খাই, চিন্তায় বাঁচি না।

‘বেটি গাবুর হইছে, বিয়ার চিন্তায় বাঁচি না। জমি নাই, বাড়ি নাই, কোনটে বেটিক বিয়া দেই? নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে সব শ্যাষ হয়ে গেইছে।’

মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কী বলি, বলার কিছু নাই। ধরলা যে হারে ভাঙতেছে, তাতে চর ফলিমারী আগামী এক মাসের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে। এটিকে রক্ষা করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এ ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে। নদী ভাঙন স্থায়ীভাবে ঠেকানো না গেলে এ চর ফলিমারী গ্রামটিকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।’

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফলিমারী এলাকাটি ভারতের সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় সিসি ব্লক দিয়ে এখানে নদী ভাঙন ঠেকাতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। ভাঙ্গনরোধে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

‘তাছাড়া নদী ভাঙর খুব বৃদ্ধি পাওয়ায় চর ফলিমারী গ্রামটিকে রক্ষা করা কঠিন হবে।’

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments