Tuesday, February 11, 2025
HomeLocalনদীর যৌবন ফুরালে চুলা জ্বলে না তাদের ঘরে

নদীর যৌবন ফুরালে চুলা জ্বলে না তাদের ঘরে

হাজারো সাধারণ মানুষ জীবিকার উৎস যাদুকাটা নদী।

রূপের নদী যাদুকাটা। কখনো গাঢ় সবুজ। আবার কখনো আয়নার মতো প্রবাহমান স্বচ্ছ জল। জলের নিচে বালু ও ছোট ছোট পাথর। দেখলে মনে হয় হাত বাড়লেই কুড়িয়ে তোলা যাবে। কিন্তু এগুলো অনেক নিচে। সন্ধ্যায় রক্তিম আভায় জলের রূপ অন্যরকম। এ যেন প্রকৃতির অপরূপ খেলা। না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। তাছাড়া এলাকাটি পর্যটন সমৃদ্ধ। কিন্তু নদীর নানা স্থান ভরাট হয়ে নৌ-যান চলাচলসহ জীবন-জীবিকার সংকট দেখা দিয়েছে। যেন যৌবন হারিয়েছে নদীটি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, যাদুকাটা নদীতে নাব্য সংকট প্রকট। হেমন্তে যাদুকাটার পানি শুকিয়ে নদী ছোট হয়ে আসে। সৃষ্টি হয় নৌজট। পণ্য পরিবহনেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে নদীর মধ্যখানের বালু সরিয়ে খনন জরুরি।

উত্তর ভারতের সুবিশাল খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশ থেকে নেমে এসেছে যাদুকাটা নদী। প্রবাহমান নদীটির পশ্চিমে রয়েছে অপরূপ সৌন্দের্যের বারেক টিলা। বর্ষায় নদীর উন্মাদনায় পিলে চমকে যায়। হেমন্তের হিমশীতল জলের কাছে চিকচিক বালুর দৃশ্য পর্যটকদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। এটি শুধু পর্যটন স্পটই নয়। আবহমানকাল থেকে এই নদী থেকে মাছ, কয়লা, বালি পাথর উত্তোলন করে সাধারণ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু গত এক বছর থেকে সেই পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নদী ভরাটের কারণে।

এমন পরিস্থিতিতে ভালো নেই বালু, পাথরশ্রমিক ও ক্ষুদ্র পাথর ব্যবসায়ীরা। একসময় নদীটি ছিল পূর্ণমাত্রায় জীবন-জীবিকার উৎস। কিন্তু এখন নদীর তলদেশে ভরাট হয়ে নৌ-যানই চলাচল করতে পারছে না।

এদিকে, নদী দিয়ে ভেসে আসা কয়লা উত্তোলন, নদীর কিছু অংশে থেকে ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। হিমশীতল পানিতে ঠ্যালা জালে সারাদিন গলাসমান পানিতে দাঁড়িয়ে হাজারো নর-নারী, শিশু, যুবকের কয়লা তুলে বিক্রির দৃশ্য নিতান্তই মর্মস্পর্শী। কিন্তু  স্থানে স্থানে নদী ভরাট হওয়ায় এসব কয়লা ও বালির মালবাহী নৌযান চলালচল করতে পারছে না।

মানিগাঁও গ্রামের নারী শ্রমিক দিলনাহার বেগম বলেন, ‘ছেলেমেয়ে নিয়া কষ্টে দিন কাটে। নদী বন্ধ হলে চুলা বন্ধ।’

শিক্ষার্থী রেজাউল মিয়া জানায়, নদীতে কয়লা কুড়িয়ে সারাদিন পরিশ্রম করে ৩০০-৩৫০ টাকা রোজগার হয়। এতে মা-বাবার সাহায্য হয়।

স্থানীয়রা বলেন, হেমন্তকালে যাদুকাটার পানি শুকিয়ে নদী ছোট হয়ে আসে। এ সময় নৌজট সৃষ্টি হয়। এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হলে নদীর মধ্যখানের বালু সরিয়ে খনন করা জরুরি। শুধু খনন হলেই সারা বছর শ্রমিকরা বালু উত্তোলন ও ক্রয়-বিক্রয় করে পরিবার নিয়ে সুখে দিনাতিপাত করতে পারবে।

যাদুকাটা নদীটি আবার ঐতিহ্যমণ্ডিত নদীটির পূর্ব তীরে শাহ আরফিনের মাজার এবং শ্রী অদ্বৈত মহাপ্রভুর আশ্রম। চৈত্র মাসে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন এই দুই তীর্থস্থানকে ঘিরে উৎসবে মেতে ওঠেন। হিন্দু নর-নারীসহ নানা বয়সের মানুষ যাদুকাটা নদীতে স্নান করে পুণ্যবান মনে করেন।

ইত্তেফাক/এসকে

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments