Tuesday, February 11, 2025
HomeLocalপ্রথম উপকূলীয় নদী ক্যাম্প ও নাগরিক সংলাপ

প্রথম উপকূলীয় নদী ক্যাম্প ও নাগরিক সংলাপ

কুয়াকাটায় উপকূলীয় নদী ক্যাম্প ও নাগরিক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার

‘বাংলাদেশ নদীর দেশ। নদী ঘিরেই গড়ে উঠছে নগর। প্রতিটি নদী ঘিরে রয়েছে আলাদা সংস্কৃতি ও ভিন্ন ঐতিহ্য। অথচ মানুষেরা আজ নদী দখল-দূষণ করে হত্যা করতে চাচ্ছে। আমরা জানি, নদীর নিজস্ব শক্তি রয়েছে। নদীকে বাধা দিতে চাইলে নদী ঠিকই তার প্রতিশোধ নেয়। আমাদের সবার মধ্যে একটু সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে বেঁচে যাবে নদী, সুস্থ থাকবে প্রাণ-প্রকৃতি।’

পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার একটি আবাসিক হোটেলে প্রথম উপকূলীয় নদী ক্যাম্প ও নাগরিক সংলাপে অংশ নিয়ে আলোচকরা এসব কথা বলেন। রিভার অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ (আরএসডিবি) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা এর আয়োজন করে।

নদ-নদী রক্ষার শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে আজ সন্ধ্যায় দুই দিনের এ আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। এতে দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলাসহ সারা দেশে নদ-নদী নিয়ে কাজ করা কর্মী, পরিবেশ ও জলবায়ু গবেষক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, উন্নয়নকর্মী এবং গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে সহায়তা করেছে পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, ইফাদ গ্রুপ, ছায়াতল বাংলাদেশ, জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটি, সুইজারল্যান্ড সহায়তা ফাউন্ডেশন ও সুইডেন ভেরিস।

অনুষ্ঠানের শুরুতে গায়ক গোলাম মোস্তফার পরিবেশ-প্রতিবেশ নিয়ে লেখা গান ‘বাঁচাও উপকূল, বাঁচাও প্রকৃতি, ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন জাগাও সারথি’ গানটি শোনানো হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বন পরিবেশ ও জলাবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। তিনি বলেন, ‘উপকূলের নদী বাঁচাতে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। নদী বাঁচলে, বাঁচবে সোনার বাংলাদেশ। এ জন্য সরকার সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও নীতিমালা হাতে নিয়েছে। সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উপকূলের সম্পদ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে রক্ষা পাবে আমাদের সম্পদশালী নদী।’

উদ্বোধনী অধিবেশনে ‘উপকূলীয় পর্যটন উন্নয়ন পরিকল্পনা’ বিষয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন হিস্টোরি অ্যান্ড হেরিটেজ ট্যুরিজমের চেয়ারম্যান আকরামুল হাফিজ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সমুদ্র এবং নদী ঘিরে প্রতিটি দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা হয়। দুঃখজনক হলো, আমাদের দেশের নদী এবং সমুদ্রকে আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। এতে আমরা উন্নয়নেও পিছিয়ে যাচ্ছি। নদী বাঁচাতে হলে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা করতে হবে। এ জন্য সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামশাদ নওরিন বলেন, উপকূলের বিভিন্ন এলাকা বিপন্ন হতে চলেছে। উপকূল রক্ষায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। শুধু সরকারের দিকে চেয়ে থাকলে হবে না, স্থানীয় পর্যায়েও নদী রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মাহবুব পারভেজ, আরএসডিবির বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান, ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ, বাংলাদেশ পর্যটন সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আনজুমান আরা বক্তব্য দেন।

এর আগে সকালে উদ্বোধনী অধিবেশনে ‘উপকূলীয় পরিবেশের সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ বিষয়ের ওপর আলোচনায় অংশ নেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘সরকার ২০১৩ সালে নদী রক্ষা কমিশন গঠন করেছে। এটা করা হয়েছে দেশের নদ-নদী রক্ষার জন্য। আমাদের দেশের নদীর সংখ্যা সাত শতাধিক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডেলটা প্ল্যান তৈরি করেছেন। এর ছয়টি লক্ষ্য রয়েছে। নদীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ভাঙন প্রতিরোধসহ কিছু পরিকল্পনা এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।’

এ অধিবেশনে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অবসরপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফায়েল আহম্মেদ, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীন, বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (বাপা) কলাপাড়া আঞ্চলিক শাখার সদস্যসচিব মেজবাহ উদ্দিন এবং আরএসডিবির খুলনা বিভাগীয় সভাপতি কমলা সরকার বক্তব্য দেন।

বিকেলে ‘পরিবেশ রক্ষায় যুবদের চিন্তা–ভাবনা’ শীর্ষক আরেকটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইকোনমিকসের সহকারী অধ্যাপক সাদিয়া ইসলাম, সাংবাদিক ফরিদ আহম্মদ, একাত্তর টিভির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো. হাবিবুর রহমান, ছায়াতল বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সোহেল রানা মতামত ব্যক্ত করেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments