Saturday, February 15, 2025
HomeGlobalভারতে ১৩ নদীর প্রাণ ফেরাতে ১৯৩০০ কোটি রুপির পরিকল্পনা

ভারতে ১৩ নদীর প্রাণ ফেরাতে ১৯৩০০ কোটি রুপির পরিকল্পনা

গবেষক মানষি আশের বলেন, ‘পর্যাপ্ত গবেষণা ও বিবেচনা ছাড়া এই বনায়ন পরিকল্পনায় যেসব গাছ লাগানো হবে সেগুলো আদৌ বাঁচবে না। একই সঙ্গে স্থানীয় জনগণের জীবনযাপনের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক হবে রাষ্ট্রীয় এমন পরিকল্পনা।’

ভারতে যমুনাসহ ১২টি নদীর প্রাণ ফেরাতে তীরে ব্যাপকহারে বনায়ন কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

১৯ হাজার ৩০০ কোটি রুপি ব্যয়ে এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা এই পরিকল্পনার সমালোচনা করে বলেন, এতে করে তীরে আরও বেশি বন উজাড় হবে। এই পরিকল্পনায় মৃতপ্রায় নদীগুলোতে প্রাণ ফেরানো ও ভয়াবহ পর্যায়ের দূষণরোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদবের সম্প্রতি প্রকাশ করা এই মেগা পরিকল্পনার আওতায় রয়েছে যমুনা, ঝিলাম, চেনাব, রাভি, বিয়াস, সুতলজ, ব্রহ্মপুত্র, লুনি, নর্মদা, গোদাবরি, মহানদী, কৃষ্ণা ও কাবেরি।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। ভারত থেকে ৫৩টি নদী বাংলাদেশে ঢুকেছে আর কেবল কুলিক নদীটি বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকেছে ৷

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বনায়ন ও পরিবেশ উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ও দেশটির বন গবেষণা ও শিক্ষা পরিষদের মাধ্যমে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা হবে।

হিমালয় পর্বতমালা ঘেরা অঞ্চলসহ এই ১৩ নদী দেশের ১৮ লাখ ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার অববাহিকাজুড়ে রয়েছে, যা ভারতের মোট আয়তনের ৫৭ শতাংশের বেশি।

সরকার বলেছে, মিঠা পানির উৎস কমে যাওয়ার কারণে পানি সংকটসহ নদীগুলোর বাস্তুতন্ত্রের ওপর চাপ অব্যাহত রয়েছে। এতে করে পরিবেশ সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে বড় বাধা হয়ে দেখা গেছে।

প্রকল্পের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন উজাড়, কম বৃষ্টিপাত, আকস্মিক বন্যা, ভূমিধস, তীরের ক্ষয়, ত্রুটিপূর্ণ কৃষি ও উদ্যানপালন পদ্ধতি, মাটির ক্ষয়, অনেক বেশি ভূগর্ভস্থ পানি তোলা, দ্রুত নগরায়ণ, বর্জ্যের বাগাড়, ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, বর্জ্য নির্মূল, তীর্থযাত্রা, অনিয়ন্ত্রিত বালু খনন এবং নদীতীর দখলে নদীগুলো এখন অস্তিত্বের সংকটে পড়ে গেছে।

পরিকল্পনায় প্রাকৃতিক, কৃষি এবং শহুরে আবহের জন্য বিভিন্ন মডেলের রূপরেখা দেয়া হয়েছে প্রতিটি নদীতে।

গ্রামের পাশঘেঁষা নদীর তীরে বড় পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বনায়ন, মাটি ও আর্দ্রতা সংরক্ষণ কাঠামো, তৃণভূমি এবং চারণভূমির উন্নয়ন, ঔষধি ও সুগন্ধি গাছের চাষ ও দাবানল ঠেকানোর মতো প্রস্তাবগুলো।

শহুরের পাশঘেঁষা নদীগুলোতে নদীপথের উন্নয়ন, ইকো-পার্কের উন্নয়ন, শিল্প ও শিক্ষাবান্ধব বনায়ন এবং অ্যাভিনিউ প্ল্যান্টেশনের কথা বলা হয়েছে।

গবেষক মানষি আশের বলেন, ‘পর্যাপ্ত গবেষণা ও বিবেচনা ছাড়া এই বনায়ন পরিকল্পনায় যেসব গাছ লাগানো হবে, সেগুলো আদৌ বাঁচবে না। একই সঙ্গে স্থানীয় জনগণের জীবনযাপনের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক হবে রাষ্ট্রীয় এমন পরিকল্পনা।’

পরিবেশ ও উন্নয়ন কেন্দ্রের একজন বিশিষ্ট ফেলো শরৎচন্দ্র লেলে বলেন, এই নথির পরিকল্পনাটি বেশির ভাগই জলাধার, নদীর তীর ও খামারের সীমানা বরাবর গাছ লাগানো। এ ছাড়া বন থেকে কিছু ছোট গাছ ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তবে এটি নতুন আঙ্গিকে বনায়নের পুরোনো পদ্ধতি ছাড়া কিছুই না। তিনি শক্তি ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার মধ্যে পরিবেশ ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা নিয়ে গবেষণা করেন৷ তিনি বলেন, এই পরিকল্পনাটি বিজ্ঞানসুলভ গবেষণা বিবর্জিত। এতে করে বাস্তবিকভাবে নদীগুলোতে প্রাণ ফিরে আসবে না।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments