Tuesday, February 4, 2025
HomeLocalপ্রতিবছর বাঁধ হয়, কাজে আসে না কৃষকের

প্রতিবছর বাঁধ হয়, কাজে আসে না কৃষকের

আগাম বন্যা থেকে বোরো ধানের ফসল রক্ষায় প্রতিবছর কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়।

হাওর ঘেঁষা দক্ষিণের জেলা কিশোরগঞ্জ। আগাম বন্যা থেকে বোরো ধানের ফসল রক্ষায় প্রতিবছর জেলার বিভিন্ন স্থানে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়। প্রতিবছর নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় তা সেভাবে কৃষকের উপকারে আসে না।

তাদের অভিযোগ, সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের জন্য বাঁধ ঘেঁষে উত্তোলন করা হয় মাটি। এতে দ্রুত সময়ে ভেঙে যায় বাঁধ। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাঁধ সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ না করে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীন এ বছরও ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নেওয়া হয়েছে একই প্রকল্প। কাজ শুরু হয় গত ১৫ ডিসেম্বর। মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। দেড় মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৫৪ শতাংশ। কোনো কোনো উপজেলায় শেষ হয়েছে ৪০-৫০ শতাংশ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা।

প্রকল্পের অধীন জেলার ৯ উপজেলায় ১৭৫ মিটার দীর্ঘ ১২৫টি বাঁধ সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ হবে। উপজেলাগুলো হচ্ছে মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, ইটনা, নিকলী, তাড়াইল, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর, ভৈরব এবং কটিয়াদি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে মিঠামইন, অষ্টগ্রাম এবং ইটনায়; ৬ কোটি ৯ লাখ টাকা। বাকি ৬ উপজেলায় বরাদ্দের পরিমাণ ৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা। গত বছর এ প্রকল্পের অধীন ৯৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতে বরাদ্দ ছিল ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা চলতি বছরের তুলনায় অর্ধেক।

অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়নের আলীনগরে প্রকল্প-১ ও প্রকল্প-২ মিলে এ বছর বাজেট ৬৫ লাখ টাকা। বাঁধ দুটি গত বছর নির্মাণ করা হয়। এ বছর সংস্কার করা হচ্ছে। এটি সংস্কারের পদ্ধতিগত সমালোচনা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

আলীনগর গ্রামের হজরত আলী বলেন, বাঁধ ঘেঁষে মাটি উত্তোলন করে কাজ করা হচ্ছে। এভাবে মাটি তুলে বাঁধ সংস্কারের ফলে সামান্য পানি এলেই বাঁধ ভেঙে যায়। মাটি সরে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে। এভাবে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে। পানির চাপ বেশি হলে বাঁধেও ফসল রক্ষা হয় না। এজন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ দরকার।

করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের শিক্ষক এমদাদুল হক বলেন, না জানিয়ে আমার মালিকানাধীন ৪ শতক জমির ওপর বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। যে বাঁধ কোনো উপকারে আসবে না, সেটির দরকার কি। এ বাঁধ এলাকার কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ খাল-নালা না থাকায় অপরিকল্পিত বাঁধের ফলে উজানের পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। এতে ফসলের ভালোর চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে।

কৃষকের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, বিকল্প কী? কৃষকদের বলে দেখুন তো বাঁধ থেকে দূরে তাদের জমি থেকে মাটি দিতে। সেটা তো তারা দেবে না। আবার সমালোচনাও করবে, তা তো হতে পারে না।

নিকলী উপজেলায় কাজে ধীরগতির কথা স্বীকার করেছেন প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাকিলা পারভিন। তিনি বলেন, নিয়মিত কাজ তদারকি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৪৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারব। 

সার্বিক বিষয়ে কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, জেলার বিভিন্ন হাওরে ফসল রক্ষায় ডুবন্ত বাঁধ মেরামত ও নির্মাণ করা হচ্ছে। এর ফলে আগাম বন্যার ক্ষতি থেকে হাওরের বোরো ধান রক্ষা পাবে।

সব অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করব। এ মাস শেষে পরিদর্শনে যাব। কোনো ত্রুটি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments