Tuesday, February 11, 2025
HomeLocalযে খালে জীবন চলে সেই খাল ভরাট

যে খালে জীবন চলে সেই খাল ভরাট

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের মুনিরজ্ঞাতি খালে মাটি ফেলে ভরাট চলছে। প্রবা ফটো

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের চাউলি হাওর ও বড়বিলের পানি নিষ্কাশন হয় পাশের দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের মুনিরজ্ঞাতি খালে। খালটি রাইয়া নদী থেকে বরাং খাল হয়ে ধরা নদীতে মিশেছে।

গুরুত্বপূর্ণ খালটি মুনিরজ্ঞাতি ও নোয়াগাঁওয়ের বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকার প্রধান অনুষঙ্গ। এই খালের পানিতে চাষাবাদ হয়, উৎপাদিত ফসল নৌকা করে বাড়িতে যায়। জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি খালটি মাটি ভরাট করে দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকটি পরিবারের বিরুদ্ধে। 

মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল থেকে ট্রাক দিয়ে মাটি এনে খাল ভরাট শুরু হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিকাল ৫টায় খাল ভরাটের কাজ চলছিল। তবে এরই মধ্যে এলাকাবাসী সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব),  স্থানীয় দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং এলাকার সংসদ সদস্যকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

অবশ্য খাল ভরাটকারী দিলাল হোসেন ও রংফুল বেগম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছেন, বাড়ি থেকে বের হবার কোন পথ নেই আমাদের। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় ইউপি সদস্যকে জানানোর পর তারা বলেছেন, সরকারি খালে মাটি ভরাট করে সড়ক করা যাবে না। তোমরা মাটি কেটে পথ করে নিলে আমরা পরে কাজ করিয়ে দেব। এজন্য আমরা কাজ শুরু করেছি।

খাল ভরাট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মুনিরজ্ঞাতি নোয়াগাঁওয়ের বাসিন্দা নূর আলী বলেন, ‘শত বছরের পুরোনো খাল এটি। এই এলাকায় জনবসতি হবার পর থেকে বর্ষায় এই খাল দিয়ে দুই গ্রামের মানুষের হাওরে যাতায়াত। হেমন্তে এই খাল দিয়ে ফসল আনা-নেওয়া এবং হাওরের পানি নিষ্কশন হয়ে আসছে। মুনিরজ্ঞাতি গ্রামের দরিদ্র মৎস্যজীবীরা এই খাল দিয়েই মাছের নৌকা নিয়ে হাওরে যান। হঠাৎ করে খাল বন্ধ হলে মানুষ মহাবিপদে পড়বে।’

সাবেক ইউপি সদস্য আকলু মিয়া বলেন, এই খাল বন্ধ হলে মুনিরজ্ঞাতি নোয়াগাঁওয়ের মানুষ বরই হাওর থেকে কাটা ধান আনা-নেওয়া করতে পারবে না। এটি রেকর্ডীয় খাল। কয়েকশ বছর আগে থেকেই শুক্রবন্দ মৌজার এই খাল মানুষ ব্যবহার করছে। সরকারি খাল কেউ ভরাট করতে পারে না। সকালে একসঙ্গে অনেকগুলো ট্রাক দিয়ে মাটি ভরাট শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীলদেরকে গ্রামের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। 

দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির বলেন, এই খাল খননের জন্য ইতিপূর্বে সরকারি অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। আমার মেয়াদকালে এখানে কাজ হয়েছে। সরকারি খাল এলাকাবাসীর কাজে লাগছে। পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। এটি ভরাট করলে অন্যরা সমস্যায় পড়বে।

দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু বক্কর বলেন, এলাকার বেশিরভাগ মানুষ খাল সচল রাখার পক্ষে। দুই-তিনটি পরিবার যারা খাল ভরাট করতে চাচ্ছেন তাদেরকে নিষেধ করেছি, তবুও তারা মাটি ভরাটের কাজ চালাচ্ছে। এরই মধ্যে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাটি ভরাটকারীদের অফিসে ডেকেছেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজন কুমার সিংহ বলেন, সরকারি রেকর্ডীয় খাল কারও উপকারে আসুক বা না আসুক, এটি ভরাট করার সুযোগ নেই। খাল ভরাট করতে নিষেধ করতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বললেন, খাল ভরাট করে সড়ক করার সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলব।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments