Tuesday, February 11, 2025
HomeNationalযৌবনে ফিরেছে পঞ্চগড়ের নিশ্চিহ্ন নদী টাঙ্গন

যৌবনে ফিরেছে পঞ্চগড়ের নিশ্চিহ্ন নদী টাঙ্গন

পঞ্চগড়ের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক নদী টাঙ্গন ফিরে পেয়েছে নতুন জীবন ও যৌবন। স্থানীয়রা বলছেন নিশ্চিহ্ণ হয়ে গিয়েছিল এই নদীর পঞ্চগড়ের অংশ। পলিমাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়া এই নদীতে চাষাবাদ করা হতো। খনন করার ফলে আবারও এই নদীতে দেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পঞ্চগড় রিজিয়ন এই নদী খননের কাজ সম্পাদন করেছে। শুধু নদীর গতিপ্রবাহ নয় এই নদীর মাঝে সৃষ্ট মনিগুলোকে (গভীর জলাধার) খননের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে। খননের ফলে কৃষি অর্থনীতিসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। 

পঞ্চগড় সদর উপজেলার গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের চিকন মাটি গ্রামের একটি জলাশয় থেকে উৎপত্তি হয়ে দিনাজপুর জেলার সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে টাঙ্গন নদী। স্থানীয়রা বলছেন একসময় এই নদীর মনি বা গভীর জলাধারগুলোতে বড় বড় দেশী মাছ পাওয়া যেতো। প্রায় ২০ কেজি থেকে ১ মণ ওজনের গজার, বোয়াল, শোল পাওয়া যেতো এই নদীতে । এই নদীতে মাছ ধরে জিবীকা নির্বাহ করতো নদীপাড়ের মাছোয়াপাড়া গ্রামের কয়েকশ জেলে। টাঙ্গণে মাছ ধরতো বলেই তাদের গ্রামের নাম হয়ে যায় মাছোয়ার পাড়া। মাগুড়া প্রধান পাড়া এলাকার কবির প্রধান জানান বৃটিশ শাসনামলে মাগুড়া প্রধান পাড়া এলাকায় মহারানী ভিক্টোরিয়ার উদ্যোগে এই নদীতে তিনটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। চাষাবাদসহ কৃষকের পানির চাহিদা ও বন্টনের জন্য এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়। তাই এখনো এই এলাকাকে মহারাণীর বাঁধ বলা হয়। 

তিনি আরও বলেন নদীর দুই পাড়ের গ্রামগুলোর কৃষকরা কৃষিকাজসহ নানা কাজে ব্যবহার করতো এই নদীর পানি। কিন্তু গত কয়েকদশক আগে শুকিয়ে যেতে থাকে টাঙ্গন। স্রোত হারিয়ে গিয়ে একসময় সমতল ভূমিতে পরিনত হয়। স্থানীয় কৃষকরা নদীতে চাষাবাদ শুরু করেন। নদী হারিয়ে যাবার ফলে পরিবেশে বিরুপ প্রভাব পড়ে। জলের সংকটে পড়ে চাষিরা। নদী হারিয়ে যাবার ফলে সেলো সেচ দিয়ে কৃষি কাজ করার জন্য ব্যায় বেড়ে যায়। দেশি মাছের সংকট দেখা দেয়। 

এসব দিক বিবেচনা করে টাঙ্গন নদী খননের উদ্যোগ নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পঞ্চগড় রিজিওন এবছরের ফেব্রুয়ারীতে এই নদীর খনন কাজ শুরু করে। খননের ফলে হারিয়ে যাওয়া টাঙ্গন নদী ফিরে পেয়েছে নতুন যৌবন। স্থানীয়রা বলছেন নদীটি পুনরুদ্ধারের ফলে কৃষি অর্থনীতি সহ পরিবেশ রক্ষায় নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। 

বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে বৃহত্তর দিনাজপুর ও জয়পুরহাট জেলার সেচ সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গন নদী খনন করা হয়েছে। দেড় কোটি টাকা ব্যায়ে ৪ কিলোমিটার নদী খনন করা হয়েছে। পুনরুদ্ধার করা এই নদী থেকে সোলার পাম্পের মাধ্যমে আশে পাশের বিভিন্ন আবাদে সেচ দেয়া হবে। দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াত এবং কৃষিপণ্য আনানেয়ার জন্য নদীতে নির্মাণ হবে তিনটি ফুট ওভার ব্রিজ। 

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পঞ্চগড় রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ফরিদুল ইসলাম জানান, টাঙ্গন নদী হারিয়ে গিয়েছিল। সেই সাথে নিশ্চিহ্ণ হয়ে গিয়েছিল এই নদীর জলাধারগুলো। এবছর খনন করে কিছুটা পুনরুজ্জিবিত করা হয়েছে। আগামী ২৫ সাল পর্যন্ত খনন সহ নানা উদ্যোগের কাজ চলবে। এই নদীতে মাছের অভয়ারন্য গড়ে তোলা হবে। নির্মাণ করা হবে ইকোপার্ক। ক্রস ড্যাম্প নির্মাণ করা হবে। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পাইপ দিয়ে সেচ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে এই এলাকার হাজার হাজার মানুষ জীবন জীবিকায় উপকৃত হবে। টাঙ্গন নদী ঐতিহ্য ফিরে পাবে বলে আমরা আশা করছি। 

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments